পাঁচশো বছর পরেও নররক্ত ছাড়া পুজো হয় না বড়দেবীর - সাত সকালের পার্বণ



পাঁচশো বছর পরেও নররক্ত ছাড়া পুজো হয় না বড়দেবীর

গণেশ চন্দ্র

রাজা নেই। নেই রাজপাট। কিন্তু রাজ আমলের নিয়ম রয়েছে এখনও আগের মতোই। কোচবিহার জেলার পুজো পার্বনগুলিতে রাজআমলের সেই প্রাচীন রীতি মেনে দেবীর প্রতিমা গড়ার কাজ চলে আজও। আনুমানিক ১৫৬২ খ্রীষ্টাব্দে এই পুজো শুরু হয় বলে জানা গিয়েছে। রাজার স্বপ্নাদেশ মত দেবী দুর্গার একেবারেই ভিন্ন রুপ। দেবী রক্তবর্না ও সুবিশাল। দেবীর বাহন বাঘ। দেবীর দুপাশে লক্ষী গনেশ স্বরস্বতী কার্তিক নেই দেবীর দুপাশে আছে জয়া ও বিজয়া। দেবীকে তুষ্ট করতে মহারাজা নরনারায়নের আমল থেকে শুরু হয়েছিল, নরবলি প্রথা৷ তবে কিছু বছর পর সেই নরবলি বন্ধ হয়ে যায়। মাঝে বৈষ্ণব ধর্মের প্রভাবের কারনে এই নরবলি বন্ধের পর ফের সেই প্রথা চালু কিন্তু উনবিংশ শতকের শুরুতে এই প্রথা বন্ধ হয়ে যায়। রাজ আমলের ইতিহাস থেকে জানা যায় মহারাজা শীবেন্দ্র নারায়ন তার আমলে নর বলির ভয়াবহতার কথা শুনে তা বন্ধ করেছিলেন। এরপর থেকেই নরবলি বন্ধ হলেও নর রক্তে ভেজানো পুতুল বলি দিয়ে তুষ্ট করা হয় বড় দেবীকে। অষ্টমীর রাতে গুপ্ত পুজোতে কালজানি গ্রামের এক পরিবার তাদের আঙ্গুল কেটে রক্তদেবেন। সেই রক্ত দিয়েই তুষ্ট হবেন বড়দেবী। তবে পুজোর দিনে মহিষ বলির নিয়ম আছে এখনও।

কোচবিহারের বড়দেবী বাড়ির দুর্গাপুজো তাই আলাদাই মাহাত্ম নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে উত্তরবঙ্গ, অসম সহ এই রাজ্যে। প্রায় ৫০০ বছর আগে রাজ আমলে যখন এই পুজো শুরু হয়েছিল তখন এই মন্দির গড়ে ওঠে। এই মন্দিরের নামেই এলাকার নাম দেবী বাড়ি। রাজ আমলের পুজো, তাই পুজোর নিয়মও আলাদা। নর রক্ত ছাড়া এই দুর্গা তুষ্ট হন না। একসময় তো দেবীকে তুষ্ট করতে নরবলির প্রথাও ছিল। তবে এখন নর বলি না হলেও নররক্তে ভেজানো তুলোর পুতুল বলি দিয়ে সন্তুষ্ট করা হয় দেবীকে। ৫০০ বছর থেকে এটাই রীতি।

No comments:

Post a Comment