আজও নাচনের বাবুবাড়ির পুজোয় হয় শ্বেতপাঁঠা বলি - সাত সকালের পার্বণ



আজও নাচনের বাবুবাড়ির পুজোয় হয় শ্বেতপাঁঠা বলি

সোমনাথ আদক

পশ্চিম বর্ধামানের লাউদহা থানার নাচন গ্রাম। খুব প্রাচীন এই গ্রামটিতে যেতে দুর্গাপুর এক্সপ্রেস ওয়ে থেকে, গান্ধি মোড়ে নেমে সাত কিমি রাস্তা।

কথিত আছে, বহু বছর আগের কোনও এক সময়ে মুর্শিদাবাদ জেলার কাশিমবাজারের রানি হরসুন্দরীর দেওয়ান রাধামাধব বন্দ্যোপাধ্যায় কাশীতে থাকার সময় দেবীর স্বাপ্নাদেশে এই সিংহবাহিনী পুজো শুরু করেছিলেন।

কাশিতে রানি হরসুন্দরী নিজের নামে একটি ধর্মশাসন তৈরি করেন। পরে তাঁর দেওয়ান রাধামাধবও একটি ধর্মশালা তৈরি করেন। পরবর্তী কালে সেই ধর্মশালাটির নাম পরিবর্তিত হয়ে পাঁড়ে ধর্মশাল নাম হয়েছে। দেওয়ান রাধামাধব এবং পরবর্তী কালে তাঁর বংশধরেরা বর্ধমান, ২৪পরগনা, মেদিনীপুর এবং পুরুলিয়া জেলায় জমিদারী পত্তণ করে শ্রীকৃষ্ণ গোপাল জীউ এস্টেটদ্বয় স্থাপন করেন।

১৮৭০ সালে লাউদহার নাচন গ্রামের এই দুর্গাপুজো শুরু হয়। আজও মহাষ্টমীর দিন এখানে সাদা পাঁঠা বলির রেওয়াজ চলে আসছেনবমীর দিন এথানে বেশ কয়েকটি পাঁঠা বলি হয়

কানাডা থেকে শুরু করে, অস্ট্রিলিয়া-সহ ভারতের প্রায় সমস্ত রাজ্য থেকে বন্দ্যোপাধ্যায় পরিবারের এপ্রজন্মের প্রায় সকলে আসেন মহাঅষ্টমীর দিন নাচন গ্রামে। নহবত আসে গৌরবাজার থেকে। নাচাগানা হয়। আজও এই পুজোকে ঘিরে ঢাকঢোল আসে বীরভূমের ইলামবাজার থেকে। সপ্তমীতে এখনও আখ ও চাল কুমড়ো বলি হয়। মহাঅষ্টমীর দিন শ্বেত পাঁঠা বলি হয়বমীতে আজও নাচাগানা হয়, বলির পর। ১৫-২০ টি কালো রঙের পাঁঠা আজও বলি হয়, ওই দিন।

সেদিন ঢাঁকের তালে গোটা গ্রামের মানুষ এক জায়গায় জড়ো হয়। আজও এই দুর্গা পুজোতে নবমীর রাতে হয় পঞ্চগ্রামী ভোজন।

পুরুলিয়া, নাচন, প্রতাপপুর, কালিকাপুর, বাঁশিয়া এই পাঁচটি গ্রামের হাজার দুয়েক মানুষ আজও এই দুর্গাদালানে এসে প্রসাদ নেয়। ভাত,ডাল, তরকারি, ভোগের মাংস এবং চাটনি, মিষ্টি দেওয়া হয়। দশমীর সকালে রূপো দিয়ে হাতল বাঁধানো দোলায় চাপিয়ে পাতি বিসর্জন করা হয়। সে শোভা যাত্রা দেখার মতো। সন্ধ্যবেলা প্রতিমাতে সিঁদুর দিয়ে শুরু হয় সিঁদুরখেলা।

সে দৃশ্যও কার্যত দেখার মতো। এলাকার বহু মানুষ এখনও দলে দলে জড়ো হয় সেই দৃশ্য দেখার জন্য। মহিলারা বিভিন্ন গ্রাম থেকে এসে এই মিলন উৎসবে যোগদান করে।

No comments:

Post a Comment