এখনো সাড়ম্বরে পালিত হয় কুমিরখোলা জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো - সাত সকালের পার্বণ



এখনো সাড়ম্বরে পালিত হয় কুমিরখোলা জমিদার বাড়ির দুর্গাপুজো

সোমনাথ আদক

সন্তান কামোনায় দেবীর স্বপ্নাদেশে কুমিরখোলা গ্রামে দুর্গাপুজো শুরু করে ছিলেন জমিদার পিয়ারিমোহন

পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থানার কুমিরখোলা জমিদার বাড়ির পুজোকে ঘিরে মেতে ওঠে আশপাশের গ্রামের মানুষও। এক সময়ে বাংলার নামজাদা জমিদার ছিলেন পিয়ারিমোহন বন্দ্যোপাধ্যায় পিয়ারিমোহন সন্তান কামনায় একদিন দেবীর স্বাপ্নাদেশে এসে কুমিরখোলা গ্রামে মহাসমারোহে দুর্গাপুজো শুরু করেছিলেন। কারণ তাঁর বিবাহের দীর্ঘ দিন পরেও তাঁর কোনো সন্তান সন্ততি হয়নি। কথিত আছে ১৮৩০ খৃষ্টাব্দে দামুদরের দেবখালের জলে দুর্গা প্রতিমার ঠাঁট ভেসে আসেসেই ঠাঁট তুলে এনে দুর্গোৎসব শুরু করেছিলেন জমিদার পিয়ারিমোহনপুজো শুরুর কয়েক বছরের মধ্যেই জমিদারের কোল জুড়ে চার পুত্র এবং দুই কন্যা আসে। পিয়ারিমোহন বাবা হন। সেই আনন্দে কুমিরখোলা জমিদার বাড়িতে ধূমধামের সঙ্গে শুরু হয় দুর্গাপুজো।

বাংলার বিখ্যাত গৌরী পণ্ডিত, যিনি ঠাকুর রামকৃষ্ণর কাছে তর্কযুদ্ধে হেরেছিলেন এবং রামকৃষ্ণের পরম ভক্ত হয়ে গিয়েছিলেন। সেই গৌরী পণ্ডিতের কাছে দীক্ষা নিয়েছিলেন পিয়ারিমোহন। গৌরী পণ্ডিতের বংশ ছিল বাঁকুড়ার ইন্দাসের বিশিষ্ট পরিচিত বংশ।

অর্থ, বৈভবে সেই জমিদার বাড়িটি ছিল পূর্ব বর্ধমানের খণ্ডঘোষ থানার কুমিরখোলা গ্রামে। এখনও এই জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজোকে ঘিরে মেতে ওঠে এলাকার মানুষ।

প্রাচীণ ঐতিহ্য মেনে আজও বাঁকুড়ার ইন্দাস থেকে গৌরী পণ্ডিতের বংশধরেরা আসেন কুমিরখোলা জমিদার বাড়ির পুজোর তন্ত্রধারক হয়ে।

জমিদার পিয়ারিমোহন এর ছোট ছেলে অন্নদাপ্রসাদ বন্দ্যোপাধ্যায় ইংরেজ আমলে প্রথম বাঙালি হিসেবে অনারারি ম্যাজিস্ট্রেট হয়েছিলেন। এই জমিদারি বংশের সন্তান জওহরলাল বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যসভার সাংসদ হন। এই বংশ থেকে তুষার বন্দ্যোপাধ্যায় বর্ধমান টাউন স্কুলের প্রধান শিক্ষক, বর্ধমান আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর কাশীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে জেলার প্রাক্তন সমাজশিক্ষা আধিকারিক প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়রা এই জমিদার পরিবারের সন্তান ছিলেন।

আজও পুজোর চারদিন জমে ওঠে কুমিরখোলা জমিদার বাড়ি। জমিদার বাড়ির উঠোন পুজোর চারদিন জমজমাট।

জমিদার বাড়ির প্রবীণ পুরোহিত ছিলেন বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন,"আজও বৈষ্ণব মতে পুজো হয় কুমিরখোলা জমিদার বাড়ির দুর্গা পুজোতে। এখনো চালকুমড়ো বলি হয়। তবে মন্দিরে পাঁঠা বলি না হলেও মন্দিরের বাইরে দেবী ভবানীর মন্দিরে সন্ধিপুজোতে পাঁঠা বলি হয়।"

বর্তমানে জমিদার পরিবারের সদস্য সংখ্যা প্রায় সাত হাজারেরও বেশি। তবে সবাই এখন আর আসে নাএখনও দেবীর স্বাপ্নাদেশের সেই দেবখালের জলেই দেবীকে নিরঞ্জন করা হয়। আজও জমিদার পরিবার আশপাশের গ্রামের হাজার তিনেক মানুষকে ভোগ খাওয়ান।

No comments:

Post a Comment