প্রায় দুশো বছরের প্রাচীন দাঁ বাড়ির পুজো, এখানে মর্ত্যে দেবী গহনা পরতে আসেন - সাত সকালের পার্বণ



প্রায় দুশো বছরের প্রাচীন দাঁ বাড়ির পুজো, এখানে মর্ত্যে দেবী গহনা পরতে আসেন

সোমনাথ আদক

রাজবাড়ির দুর্গাপুজো মানেই শত-শত বছরের ইতিহাস। উত্তর কলকাতার পুরোনো রাজবাড়ির পুজো বললেই যে পুজোগুলোর কথা প্রথমেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে তার মধ্যে জোড়াসাঁকো অঞ্চলের শিবকৃষ্ণ দাঁর বনেদি বাড়ির পুজোর নাম বিশেষভাবে উল্লেখ যোগ্যএবছর এই বনেদি বাড়ির পুজো ১৮৬ বছরে পা রাখলো।

প্রত্যেক বনেদি বাড়ির পুজোর সঙ্গেই জুড়ে রয়েছে কোনও না কোন গল্প, কোনও না কোনও ইতিহাসউত্তর কলকাতার জোড়াসাঁকো অঞ্চলের দাঁ-বাড়ির দুর্গা পুজোর সঙ্গেও জড়িয়ে রয়েছে এমনই এক গল্প। কথিত আছে, দাঁ বাড়িতে মা দুর্গা গয়না পরতে আসেন। পুজো শুরু হয় ১৮৪০ সালে। প্রতিমার জন্য একসময় নাকি শিবকৃষ্ণ দাঁ প্যারিস ও জার্মানি থেকে সোনালি রঙের ধাতুর সরঞ্জাম এনে গহনা গড়াতেন। দাঁ বাড়ির ঠাকুর এখনও এক চালার চালচিত্রে পুজো হয়। বলা হয়, মা দুর্গা যখন মর্ত্যে আসেন, তখন প্রথম দাঁ বাড়িতেই তিনি গয়না পরে সাজগোজ করেন।

দাঁ বাড়ির পুজোর সঙেগ জুড়ে রয়েছে এক দীর্ঘ দিনের ইতিহাস। সেই ইতিপাসের পাতা ওল্টালে দেখতে পাওয়া য়ায়, দাঁ-বাড়ির পূর্বপুরুষ বর্ধমানের গকুলচন্দ্র দাঁ। নিসন্তান গকুল দাঁ ১৮৪০ সালে কলকাতায় চলে আসেন। কলকাতায় এসে হলধর দত্তের ছোট ছেলে শিবকৃষ্ণ দত্তকে চার বছর বয়সে দত্তক নেন। সেই বছর থেকেই উত্তর কলকাতায় দাঁ-বাড়িতে পুজো শুরু হয়। এই পরিবারেরই এক প্রবীন সদস্যের কথায়, 'শোনা যায়, শিবকৃষ্ণ দাঁ নিজেকে সুন্দর দেখাতে, সর্বক্ষণ সোনার গহনা পরে থাকতে ভালোবাসতেন। সেখানে থেকে একদিন দুর্গা মাকে সোনার গহনা পরানোর ইচ্ছে জাগে। ইচ্ছা মতো তিনি প্যারিস ও জার্মানি থেকে গহনার সরঞ্জাম নিয়ে এসে দেবীকে পরানো শুরু করেছিলেন। সেই থেকেই প্রচলন, মর্ত্যে দুর্গা প্রথম এই বাড়িতেই গহনা পরতে আসেন।' সেই সময়েই গহনারই বেশ কিছু এখনও রয়েছে, যা চালচিত্রে ব্যবহার করা হয়। তার সঙ্গে বর্তমান সময়ের নকশার গহনা দিয়ে এখন প্রতিমার সাজসজ্জা করা হয়। এই বাড়ির দেবী সাজসজ্জার অনেকটা অংশ জুড়ে সোনা-রুপোর কাজ রয়েছে। দেবীর পোশাকে রয়েছে সাবেকিয়ানার ছাপ।

এবাড়ির সন্ধিপুজোয় বিশেষ রীতি রয়েছে। এ বাড়িতে বৈষ্ণব মতে পুজো হয়, তাই বলিদানের নিয়ম নেই। পুজোয় অন্নভোগ হয় না। লুচি, নানা রকমের মিষ্টিতে ভোগ করা হয়। এ বাড়ির সন্ধীপুজো বিশেষ আকর্ষণ। এক মন চালে দেবীকে নৈবেদ্য দেওয়া হয়। অষ্টমী পুজোর শেষ ও নবমী পুজোর সন্ধিক্ষণ মানে সন্ধিপুজোর সময় ঠাকুর দালান ধোয়া থেকে পুজোর জন্য নৈবেদ্য সাজানো, সবটাই বাড়ির পুরুষ সদস্যরা করে থাকেন। বাড়ির মহিলা সদস্যরা ফল কেটে দিয়ে সাহায্য করে থাকেন বলে জানতে পারা যায়

No comments:

Post a Comment